প্রকাশিত:
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:০৮
২০০৮ থেকে ২০২৩—এ ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে বের করে নেওয়া এ অর্থ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি। ফলে এ অর্থে অনায়াসে বাজেট ঘাটতি মেটানো সম্ভব হতো।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে ২৪টি ছোট-বড় অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এসব অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাংক খাতের অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। আজ শনিবার সিপিডি আয়োজিত অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনাবিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আয়োজিত অর্থনীতির চলমান সংকট ও করণীয়–বিষয়ক ব্রিফিংয়ের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক খাতের সূচকগুলোর অবনমন হচ্ছে। খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য সূচকে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। গত ১৫ বছরের ব্যাংক থেকে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ।
পরে এক সাংবাদিক জানতে চান, ব্যাংক থেকে যে অর্থ লুট করা হয়েছে, তার কতটা অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে, আর কতটা পাচার হয়েছে? জবাবে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশও করে না। তবে ধারণা করা যায়, এ অর্থের একটি অংশ পাচার হয়েছে, কিছু অংশ হয়তো অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে।’
বর্তমানে ব্যাংক খাত বৈকল্য অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি। সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক বলেন, অর্থনীতি ক্রমে ভঙ্গুর থেকে ভঙ্গুরতা হচ্ছে। অর্থনীতির চার খাতের মধ্যে ব্যাংক খাত বৈকল্য দশায় পড়েছে। মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার ছুটে চলা অব্যাহত রয়েছে, বহিঃখাত পঙ্গুত্বের ভেতরে পড়ছে আর শ্রম খাতে অন্ধত্ব বা স্থবিরতা বিরাজ করছে।
সিপিডি বলছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন বড় ধরনের চাপ বা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অতীতে অর্থনীতিতে এত ধরনের চাপ কখনো তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এ জন্য বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থার দরকার। এ ধরনের সংস্কারের জন্য যে রাজনৈতিক ও নির্বাচনব্যবস্থা দরকার, সেটি দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনের পরও অর্থনীতিতে কোনো সংস্কার হবে কি না, এটি প্রশ্নসাপেক্ষ।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংক খাত এখন ব্যক্তিস্বার্থের হাতে কুক্ষিগত হয়ে গেছে। এ কারণে এই খাতে সংকট আরও বাড়ছে। যারা এ খাত থেকে বড় বড় ঋণ নিচ্ছে, তারাই আবার ঋণ পুনঃ তফসিলের নানা নিয়মকানুন তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করছে। শুধু ব্যাংক খাত নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে জিম্মি। ফলে এসব খাতে কতটা সংস্থার করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশে বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে। এতে আমরা আবারও এক দেশে দুই অর্থনীতির পথে চলে যাচ্ছি। অথচ দুই অর্থনীতির বিরুদ্ধেই বঙ্গবন্ধু লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। যার হাত ধরে দেশের স্বাধীনতা এসেছে। কিন্তু এখন সম্পদের বণ্টনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে আবারও দুই সমাজ বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। এ ব্যবস্থা রোধ করতে হলে সম্পদ বণ্টনের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন: