প্রকাশিত:
২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মারামারি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। গত দুই দিনে রাজশাহীতে স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ও মাইক ভাঙচুর এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে অপর এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কুষ্টিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের গাড়ি ভাঙচুরের দায়ে নৌকার কর্মী এক ইউপি সদস্যকে এক দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী ক্যাম্প নিয়ে সংঘাত
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে ২০ ডিসেম্বর বুধবার স্বতন্ত্র এক প্রার্থীর কর্মিসভা চলছিল। এ সময় ওই প্রার্থীর এক সমর্থকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থককে এক দিনের কারাদণ্ড দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম শরিফুল ইসলাম। তিনি নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। শরিফুল নৌকার প্রার্থী ও এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের সমর্থক।
১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায় শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রাত আটটার দিকে নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলামকে এক দিনের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
রাজশাহীর বাঘাতেও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহেনুল হকের নির্বাচনী ক্যাম্প ও প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে রাহেনুল হকের নির্বাচনী এজেন্ট ও বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম গতকাল চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ওরফে শুভ, মো. সোহাগ, মো. টিটুল, মো. বিপুল ও মো. সবুজের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়,১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে নৌকার প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের সমর্থকেরা চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বামনদিঘায় নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেন। পরে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মালেকার মোড়ে মসজিদ-সংলগ্ন রাস্তায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁদের প্রচার মাইক ও মাইক বহনকারী গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সন্ধ্যার দিকে নামাজের সময় মাইক বাজানো হচ্ছিল। তখন মাইক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল শুধু। তাঁদের কোনো নির্বাচনী কার্যালয় বা প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়নি।
পাল্টাপাল্টি হামলা, মারধর
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও পোস্টার সাঁটানোর সময় কয়েকটি স্থানে পাল্টাপাল্টি হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের এক কর্মীকে পোস্টার সাঁটাতে বাধা ও মারধরের অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাসহ নৌকার তিন সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁদের গ্রেপ্তারের পর গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হামলায় আহত ওই ব্যক্তিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত আবদুর রাজ্জাক (৩৫) দুর্গাপুর উপজেলার দহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ওবায়দুর রহমানের সমর্থক। ওবায়দুর রহমান রাজশাহী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এই আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ।
হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও সদরের আংশিক) আসনের বরমী ইউনিয়নের বড়নল গ্রামে। গতকাল দুপুরে প্রচারণার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরের এই ঘটনা ঘটে। এতে নারী কর্মীসহ তিনজন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা হলেন আবদুল মালেক, মাসুদা বেগম ও সুমি আক্তার। তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এই ঘটনায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলী।
শ্রীপুরের ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, খবর শুনে সেখানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর আসিফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস ওরফে শোভনের দুই সমর্থককে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে আহত শরিফুল ইসলামের বাবা ময়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় মামলাটি করেন। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মন্তব্য করুন: