প্রকাশিত:
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৫৪
রেহানা (রেহানা মরিয়ম নূর) থেকে মুশকান জুবেরি (রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি); কখনো সুলতানা (গুটি) থেকে হেনা রহমান (খুফিয়া)—সব চরিত্রেই একের পর এক নিজেকে প্রমাণ করেছেন অভিনেত্রী বাঁধন। আর এই চরিত্রগুলোই যেন দিন দিন বদলে দিচ্ছে এই অভিনেত্রীকে। নিজের মতো করে একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন, চরিত্রগুলো মনমতো হওয়া চাই। নারীপ্রধান চরিত্র হলে কোনো কথা হবে না। কিন্তু আফসোস একটাই, নারীপ্রধান চরিত্রের প্রতি লগ্নিকারীদের অবহেলা। হয়তো এ কারণেই মনের মতো চরিত্র মেলে না। এর ভিড়ে গতকাল সোমবার থেকে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’–এর ‘তদন্ত’ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এর আগে বলে নেওয়া ভালো, এশা মার্ডার ছবিতে নারীপ্রধান পুলিশের চরিত্রে দেখা যাবে বাঁধনকে। গতকাল চলচ্চিত্রটির দ্বিতীয় লটের শুটিং শুরু হয়েছে।
‘আমি রেহানা থেকে নারীপ্রধান চরিত্রে চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাচ্ছি। একটা সময় ছিল আমাদের প্রযোজক, পরিচালক মনে করতেন, নারী কেন প্রোটাগনিস্ট (প্রধান চরিত্র) হবে! রেহানা থেকে হেনায় সেটা দেখিয়ে দিয়েছি। দর্শক চরিত্রগুলো পছন্দ করেছেন। কিন্তু আমাদের এখানে লগ্নিকারীরা ঝুঁকি নিতে ভয় পান’—কথাগুলো একনিশ্বাসে বললেন বাঁধন। তিনি মনে করেন, এখন ভক্তরা ভালো গল্প দেখতে চান। সেটা ঠিকমতো পেলে চরিত্র নিয়ে আর অভিযোগ থাকে না। কারণ, নারীপ্রধান চরিত্র মানেই সেখানে নারীর সংগ্রাম তুলে ধরতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। বাঁধন বলেন, ‘গল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের একটা সামাজিক বাধা সব সময়ই থাকে। সেখানে এবারও প্রধান চরিত্রে অভিনয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমার যে দর্শক তৈরি হয়েছে, তাঁরা রক্তমাংসের সাধারণ পুলিশ ও তার তদন্তে ডুবে থাকবেন, এটা আমি বলতে পারি।’
রেহানা সিনেমার পর একদমই কম কাজে নাম লেখাতে দেখা গেছে বাঁধনকে। এই সময়ে একাধিক চিত্রনাট্য হাতে পেয়েছেন। কিন্তু তেমন কোনো কাজ তাঁকে টানেনি। হাতে গোনা কিছু কাজ করেছেন। বড় কাজের মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে চরকির ‘গুটি’ ওয়েব সিরিজ, এরপর এবার এক বছর পর এশা মার্ডার সিরিজ। বাকি সময়টা শুধু নিজেকে দিয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন। বাঁধন বলেন, ‘চরিত্রের যে প্রস্তাব পাই না, তা নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মনমতো চরিত্র তেমন একটা পাচ্ছি না। এটা আমাকে বিরক্ত করে। আবার এটা ভেবে ভালো লাগে, যে কাজগুলো করছি, সেগুলো আমার পছন্দের।’
ম। কীভাবে চলেন? এমন প্রশ্নের মুখে নাকি প্রায়ই পড়তে হয় এই অভিনেত্রীকে। যে প্রশ্নের সাবলীল উত্তর মনে করিয়ে দেয়, এ যেন বদলে যাওয়া অন্য এক বাঁধনের কথা। সে কথা তাঁর মুখেই শুনি, ‘একটা সময় আমার মধ্যে অনিশ্চয়তা ছিল। কাজ না পেলে কী হবে, আমার এখন টাকা জমাতে হবে। এটা-সেটা করে ফেলতে হবে। পরে এগুলো করতে গিয়ে দেখলাম, নানা চাপে বর্তমানকে নষ্ট করছি। বর্তমানকে এনজয় করতে চাই। আমি আমার মতো অধিকার নিয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। যে কারণে এখন আমার জীবনযাপন সরল। কোনো কিছুতেই চাপ নিই না। মা-বাবার সঙ্গে থাকি। আমার চাহিদা অনেক কম। যা না হলেই নয়। গাড়ি, বাড়ি, দামি ব্র্যান্ড আমাকে টানে না। এখন শুধু ভালো কাজ করে যেতে চাই। আর মেয়েটাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য।’
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে অভিনেত্রী বাঁধনের বাবার বাড়ি। তেমন একটা যাওয়া হয় না। সেখানেই ছুটে যেতে হলো বাঁধনকে। গেলেন লোকাল বাসে। দেশ–বিদেশে পরিচিতি পাওয়া এই তারকার কাছে এটা যেন এক দারুণ অভিজ্ঞতা। বাঁধন বলেন, ‘আমি তো মা–বাবার গাড়ি ব্যবহার করি। আমার নিজের কোনো গাড়ি নেই। এদিকে আমার মেয়ে বেশ কদিন ধরে মা-বাবার সঙ্গে আমাদের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। তারপর সোমবার থেকে যেতে হবে শুটিংয়ে। ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুটিং। মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছিল। দুই দিন নেই, তাতেই মনে হচ্ছিল ২০০ বছর। সারপ্রাইজ দিতেই মিরপুর থেকে বাসে উঠি। গ্রামের মেইন রাস্তায় নেমে পরে টুকটুকে (স্থানীয় যানবাহন) চড়ে বাড়ি যাই। মেয়ে আমাকে দেখে অবাক। আর আমি এর আগেও লোকাল বাসে অনেকবার উঠেছি। মাস্ক পরে থাকি, কেউ চিনতে পারে না। যাত্রীদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়। আমার পোশাক, অবয়ব—সবকিছুই সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে মানিয়ে যায়।’
মন্তব্য করুন: