প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:২১
রান্নায় দুটি কারণে পুষ্টির মানের পরিবর্তন হতে পারে। এক. তাপ—আপনি কতটা তাপে রান্না করছেন। দুই. সময়—কতক্ষণ ধরে রান্না করছেন। মাইক্রোয়েভে সাধারণত পুষ্টির ক্ষতি হয় কম, স্টিম বা ভাপে মাঝারি এবং ফুটন্ত অবস্থায় ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি।
শাকসবজিতে দুটি উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি, সি। অপরটি হলো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ডি, ই, কে। পানিতে দ্রবণীয় শাকসবজিগুলো পানিতে রান্না করলে সেই ভিটামিন কিছু পানিতে মিশে সেই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টকে অক্ষুণ্ন রেখে শোষণযোগ্য করে তোলে। আবার চর্বিতে দ্রবণীয় খাবারগুলো চর্বিতে রান্না করলে আরও শোষণযোগ্য করে তোলে।
ক্রুসিফেরাস সবজি হলো ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি। এসব সবজিতে আছে ভিটামিন কে ও ক্যারোটিনয়েডস। এগুলো সাধারণত তাপের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সেদ্ধ ফুলকপিতে ভাপানো ফুলকপির তুলনায় গ্লুকোসিনোলেট, পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েডের পরিমাণ কম থাকে। তবে স্টিম করলে এসব সবজির অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ভালো পাওয়া যায়।
ফুলকপি ৫ মিনিট পানিতে ফোটালে পুষ্টির প্রায় ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়। ১০ মিনিট পানিতে ফোটালে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষতি হয়। ৩০ মিনিট পানিতে ফোটালে ৭৫ শতাংশ পুষ্টির ক্ষতি হয়। এর পরিবর্তে আলতোভাবে ভাজলে পুষ্টির মান বেশি অক্ষত থাকে। ভাজা ক্রুসিফেরাস সবজি মিথানোলিক নির্যাস বজায় রাখে। সেখানে সর্বোচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। এ ছাড়া আরেকটি ভালো পদ্ধতি হলো, চুলার ওপর অল্প পানি, লেবুর রস আর তেল দিয়ে আলতো করে ভাজা।
টমেটোতে লাইকোপেন থাকে। লাইকোপেন হৃদ্রোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধে, চোখের সমস্যা দূর করতে, ক্যানসারসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। তবে এটি কাঁচা বা ভাপে খেলে সর্বোচ্চ লাইকোপেন পাওয়া যায় না।
টমেটোতে থাকা সর্বাধিক লাইকোপেন পেতে হলে রান্না করে খেতে হবে। কিন্তু একটি অসুবিধা হলো দুই মিনিটের জন্য রান্না করা হলে ১০ শতাংশ ভিটামিন সি কমে যায়। আবার দুই মিনিটের জন্য টমেটো রান্না করলে প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি লাইকোপেন বেড়ে যায়। এক কাপ রান্না করা টমেটোয় ৪৬০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে, যা দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের প্রায় এক–পঞ্চমাংশ। তাই অতিরিক্ত গ্রহণ করবে না। এ ছাড়া কাঁচা টমেটো প্রচুর পরিমাণ খেলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত ব্রাশ করা উচিত।
মটরশুঁটিকে ভাজা বা সেদ্ধ করার বদলে ভাপালে এর ভিটামিন সি কম নষ্ট হয়। মটরশুঁটি ভাজলে ৮৭ শতাংশ ভিটামিন সি নষ্ট হয়। আবার সেদ্ধ করলে ৪৮ শতাংশ নষ্ট হয়। আর ৫ মিনিটের জন্য স্টিম করলে ৩২ শতাংশ ভিটামিন সি নষ্ট হয়। তাই মটরশুঁটি যথাসম্ভব কাঁচাই খাওয়া ভালো।
আধা কাপ রান্না করা পালংশাকে ১০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে। তবে ১০ মিনিট সেদ্ধ করলে ৫৮ শতাংশ ফোলেটই নষ্ট হয়ে যায়। ভাজলে ৫০ শতাংশ ক্ষতি হয়। আবার ৫ মিনিটের জন্য ভাপিয়ে রান্না করলে ফোলেটের কোনো ক্ষতি হয় না। তাই পালংশাক রান্না করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাষ্পে বা ভাপ দিয়ে রান্না করা।
গাজরে বিটা ক্যারোটিন থাকে। বিটা ক্যারোটিনের শোষণ কাঁচা গাজর থেকে ৬ দশমিক ৫ গুণ বেশি ভাজা গাজরে। এ ছাড়া অল্প সময় ধরে একে সেদ্ধ করলে এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের ঘনত্ব বাড়ে। তাই কাঁচা গাজরের তুলনায় ভাজা বা সেদ্ধ খেলে এর শোষণ বাড়বে।
মন্তব্য করুন: