শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি কেলি রদ্রিগেজ
  • প্রথমবার সচিবালয়ে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • এস আলমের ঋণ জালিয়াতি, কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ১৩ জনকে তলব
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য: ক্যাথরিন ওয়েস্ট
  • ২০২৫ সালে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ হবে
  • নাম ও পোশাক বদলাচ্ছে র‌্যাব
  • গণহত্যা মামলায় ৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ
  • আজারবাইজানের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

পাবনায় ইছামতী নদী খননের সাড়ে ৭ কোটি টাকা ফেরত গেল

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
১৯ জুন ২০২৩, ১৩:৫১

পাবনা শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী নদী। তবে দখল ও দূষণে সেই নদী মৃতপ্রায়।

পাবনা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের কাজ আবারও বন্ধ হয়ে গেছে। চার দফা মেয়াদ বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়েছে নদীর দুই পাড়ের দখলদার উচ্ছেদ ও খননের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা।

 

অন্যদিকে নদীর কিছু এলাকা নামমাত্রভাবে খনন করা হলেও আবারও পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনা পড়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। এতে লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা অবিলম্বে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের দাবি করেছেন।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসন বলছে, দখলদারদের মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

 

পাউবোর পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নদীর দুই পাড়ের ৫ দশমিক ৬৭ কিলোমিটারে দখলদার উচ্ছেদের জন্য ২ কোটি ৭৯ লাখ ও ২ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাউবো ১ হাজার ৫৩ টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। এরপর ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ও পাউবো যৌথভাবে শহরের লাইব্রেরি বাজার ব্রিজ এলাকা থেকে উৎসমুখের দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় ৬১০টি অবৈধ স্থাপনা।

 

উচ্ছেদ এলাকায় শুরু করা হয় নদী খননের কাজ। এর কয়েক মাসের মধ্যেই মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। ফলে মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর চার দফা প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আর উচ্ছেদ ও খননকাজ শুরু করতে পারেনি পাউবো।

 

 

পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই তারা উচ্ছেদ ও খননকাজ করতে পারেনি। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তাতে বরাদ্দের ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি না হওয়ায় বাকি টাকা চলতি জুন মাসে ফেরত চলে গেছে।

 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, পাউবো সঠিকভাবে খনন এলাকা বুঝিয়ে দিতে না পারায় তাঁরা খননকাজ করতে পারেননি। আর যখন প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন খরচ কম ছিল। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় খরচ বেড়েছে। ফলে আর কাজ করা সম্ভব হয়নি।

 

১৭ জুন শনিবার সকালে নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে পানি নেই। পুরো নদী যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে আছে। খনন করা এলাকায় পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনায় আবার ভরাট হয়ে গেছে। নদীর দুই পাড়ে কিছু এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের চিহ্ন এখনো রয়েছে। আবার কিছু এলাকায় নদীর ভেতরে পাকা স্থাপনা রয়েছে। উচ্ছেদের পরও কিছু দখলদার আবার নদীর জমি নিজের মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কেউবা আবার ঝুলিয়েছেন আইনি নিষেধাজ্ঞার নোটিশ।

 

নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, উচ্ছেদের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। মামলার অজুহাতে ক্ষমতাবান ও ধনী ব্যক্তিদের স্থাপনা ভাঙা হয়নি। তাঁদের কারণেই এই উচ্ছেদ অভিযান বারবার বন্ধ করা হয়েছে। আর এ কারণেই প্রকল্পের টাকা ফেরত গেছে।

 

এদিকে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের টাকা ফেরত যাওয়ার খবরে জেলার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ১৩ জুন পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজনে ও ইছামতী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সহযোগিতায় পাবনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে সভা হয়। এই সভা থেকে ইছামতী নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেওয়ার দাবি তোলা হয়।

 

সভায় ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির সভাপতি এস এম মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম।

 

সভায় রেজাউল রহিম বলেন, ‘ইছামতী নদী খনন জেলাবাসীর প্রাণের দাবি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই বারবার নদী খনন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা জেলাবাসী কিছুতেই মেনে নেবে না। সেনাবাহিনী নিয়োগ করে হলেও নদীটির দখলদার উচ্ছেদ ও খনন করা হবে বলে প্রত্যাশা করি।’ 

 

এ সম্পর্কে পাউবোর পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, তিনি নতুন এসেছেন। প্রকল্পটির বিষয়ে তাঁর কিছুই জানা নেই। তবে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

 

জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘ইছামতী নদী খননে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। প্রকল্পের টাকা ফেরত গেলেও নদী খননের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর