প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:২০
চলতি বছর নতুন করে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ায় ডিমের দাম সারা বিশ্বে অনেকটাই বেড়েছে। আগামী বছর তা আবারও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, দেশটির ৪২৬টি বাণিজ্যিক মুরগির ঝাঁক এবং আরও ৫৮৬টি ঘরে পালা মুরগির ঝাঁকের মধ্যে এইচপিএআই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এ সবকিছু হয়েছে গত ৩০ দিনে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে দেশটির ৭২.৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ২৫ লাখ মুরগি এই বার্ড ফ্লু রোগে মারা গিয়েছিল।
এই পরিস্থিতি কেবল ২০১৫ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয়। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সেবার যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ কোটির বেশি মুরগি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
বার্ড ফ্লু অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ, মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুরো মুরগির ঝাঁক সাবাড় করে ফেলতে পারে। অর্থাৎ, ঝাঁকে কোনো মুরগির মধ্যে এই রোগ দেখা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব মুরগি মারা যেতে পারে। স্বাভাবিকভাবে এ কারণে ডিমের দাম অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। চাহিদা একই থাকলে এবং সরবরাহ সংকুচিত হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
অক্টোবর মাসের পর যুক্তরাষ্ট্রে মুরগির মৃত্যু বেড়েছে। অক্টোবর মাসে দেশটিতে ১৩ লাখ ৭০ হাজার মুরগি মারা যায়। এরপর নভেম্বর মাসে ৮০ লাখ এবং ডিসেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৩০ হাজার মুরগি মারা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুরগির ডিম উৎপাদন ও সরবরাহের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান কাল-মেইন ফুডস জানিয়েছে, ক্যানসাসে তাদের একটি খামারে এইচপিএআই ভাইরাসের প্রকোপ ধরা পড়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, তাদের মোট মুরগির মধ্যে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বা ৬ লাখ ৮৪ হাজার ডিম উৎপাদনকারী মুরগি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে
এই পরিস্থিতিতে ক্যানসাসে ডিম উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল মেনে চলছে এবং ভালো মুরগিগুলোকে অন্যান্য খামারে স্থানান্তরিত করেছে। এখন পর্যন্ত অন্যান্য খামারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথা জানায়নি কাল-মেইন। এই রোগ যাতে অন্যান্য খামারে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে ওহাইওর আরেকটি খামারে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত ২৬ লাখ মুরগি ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মেরে ফেলা হয়েছে। মাত্র ১ মাস আগে সেখানকার আরেকটি খামারে ১৩ লাখ মুরগি মেরে ফেলা হয়েছিল।
গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম প্রতি ডজন ৫ দশমিক ৪৬ ডলারে উঠে যায়। এরপর বার্ড ফ্লুর প্রকোপ কমে গেলে দাম আবার কমে আসে। কোম্পানিগুলোর তৎপরতার কারণে মুদিদোকানগুলোতে ডিমের অভাব হয়নি।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কাল-মেইনের মতো কোম্পানিগুলো বিপুল মুনাফা করেছে। সেই পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেট সদস্যেরা ফেডারেল কমিশনকে দিয়ে এই মূল্যবৃদ্ধির তদন্ত করার দাবি জানিয়েছিল।
এখন বার্ড ফ্লুর প্রকোপ আবার বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ–স্বল্পতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং পরিণতিতে দাম বাড়ছে। এবার ডিমের দাম কতটা বাড়বে, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুরগির ডিমের পাইকারি দাম ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
উৎসবের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত ডিমের দাম বেড়ে যায়। বিশেষ করে ইস্টার, থ্যাংকসগিভিং, ক্রিসমাস বা বড়দিনের সময় চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। উৎসবের খাবারের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো ডিম। সামনে বড়দিন। এর ফলে দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন: