প্রকাশিত:
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৭
জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত করতে পদক্ষেপ নিতে ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্রবাসীরা যাতে সহজে স্কিমে নিবন্ধন করে বৈধভাবে টাকা পাঠাতে পারেন, ব্যাংকগুলোকে সে জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে অনলাইন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রবাস’-এর নিবন্ধন বাড়াতে ব্যাংকের অংশগ্রহণ ও করণীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার সভায় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ বিষয়ে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশে খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেছেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জনগণকে যুক্ত করতে ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আশা করেন, ব্যাংকগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পেনশন স্কিমের প্রচার-প্রচারণা চালাবেন। বিদেশ থেকে প্রবাস স্কিমে প্রবাসীরা নিবন্ধন করে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে পারেন সে বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেবেন।
ব্যাংকগুলো ব্যাবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রবাস স্কিমে সহজে নিবন্ধন করে মাসিক জমার অর্থ বৈধভাবে পাঠাতে ব্যাংকগুলো দ্রুত বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে অনলাইন ব্যবস্থা পরিমার্জন ও পরিবর্তন করবে। ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে বিদেশে তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফরম, এক্সচেঞ্জ হাউস, ফিনটেক কম্পানির সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো দ্রুত সমন্বয় করবে। এ ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার স্কিমে নিরবচ্ছিন্ন অর্থ পাঠানো নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেবে।
আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ব্যাংকগুলো দেশে-বিদেশে নিজস্ব উদ্যোগে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুফল সম্পর্কে প্রচার কার্যক্রম চালাবে। এ কাজে সহযোগিতা করবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকগুলোর বিদেশে প্রচারসহ যাবতীয় কার্যক্রমে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর শ্রম উইং সহযোগিতা করবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব করপোরেট হাউসের সেবা দেয় ব্যাংক, সেসব কম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতাভুক্ত প্রগতি স্কিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য উদ্বুদ্ধ করতে কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
জানা যায়, বর্তমানে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মন্থর গতি চলছে।
বিশেষ করে প্রবাস স্কিমে নিবন্ধন একেবারেই সীমিত। এ কারণে স্কিমে নিবন্ধন বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগিতা চায় অর্থ মন্ত্রণালয়।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান করিরুল ইজদানী খান বলেন, স্কিমে যত বেশি গ্রাহক অন্তর্ভুক্ত হবে সর্বজনীন পেনশনের উদ্দেশ্য তত বেশি ফলপ্রসূ হবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হওয়া ব্যাংকগুলোর আলাদা তথ্য-প্রযুক্তি প্ল্যাটফরম রয়েছে। এগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর সেবা সহজ হলে গ্রাহক নিবন্ধন বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
ওই সভায় সোনালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, সোনালি ব্যাংকের নিজস্ব পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ই-ওয়ালেট কার্যক্রম আছে। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশে এজেন্টদের কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ও প্রবাস স্কিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করবে। অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মনে করেন, স্কিমের জন্য ইউনিফর্ম প্ল্যাটফরম করা হলে বেশি গ্রাহক স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। তখন এই কার্যক্রম আরো ফলপ্রসূ হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই পেনশন কার্যক্রমে নিবন্ধনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করার আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পেনশন কার্যক্রমে চারটি স্কিমে যুক্ত হচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস স্কিম, প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন করছেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা, অন্যদিকে সুরক্ষা স্কিম স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যক্তিদের জন্য ও নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য সমতা স্কিম রয়েছে।
প্রবাস স্কিমে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে। প্রণোদনার এই অর্থ চাঁদা হিসেবে জমা হবে। পেনশন পেতে চাঁদাদাতাদের অফিসে আবেদন করতে হবে না। নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দিলে ৬০ বছর পূর্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইলেকট্রনিকস ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাসিক পেনশনের টাকা জমা হবে। প্রবাস স্কিমে নিবন্ধন করে তিন মাস, ৯ মাস ও এক বছরের চাঁদা একসঙ্গে জমা দিতে পারবেন।
মন্তব্য করুন: