প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২৩, ১৪:৪৩
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় ১২বছরের শিশু নয়ন হত্যা মামলার চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন করেছে নেত্রকোণা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
২০২২ সালের ৭ নভেম্বর নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার পানগাও গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে নয়ন (১২) নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পরেরদিন সকালে একই গ্রামের জনৈক মঞ্জু মিয়ার নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে থেকে নয়নের মরদেহ উদ্ধার করেন কেন্দুয়া থানা পুলিশ।
নিহতের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে ৭ নভেম্বর কেন্দুয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কেন্দুয়া থানার মামলা নং- ১৬।
কেন্দুয়া থানা পুলিশ ৩ মাস মামলা তদন্তের পর নেত্রকোণা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।
২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় পিবিআই নেত্রকোণার ইউনিট ইনচার্জ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবিরের সার্বিক সহযোগীতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমে এস আই আশরাফুল হাসান ও পরবর্তীতে পুলিশ পরিদর্শক মো: ইমদাদুল বাশার নয়ন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে প্রযুক্তি ও সোর্স নিয়োগ করেন।
পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে নয়ন হত্যাকাণ্ডের এক চাঞ্চল্যকর রহস্য।
নয়ন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামীদের সাথে একই গ্রামে ২০১৭ সালের রহিমা হত্যা মামলার আসামীদের বিরোধ চলে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামী একই গ্রামের মৃত রহিম উদ্দীনের ছেলে আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ(৩০) রহিমা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী নুরুল হক ও জজ মিয়ার শ্যালক এবং নয়ন হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত ১ নং আসামী মোজাহিদের বাবা সবুজ মেম্বারের সৎ ভাই। মোজাহিদের বাবা সবুজ মেম্বারের সাথে ৩০ শতাংশ জমি নিয়ে গ্রেফতারকৃত আসাদুজ্জামানের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল।
গাছের সুপারি পাড়াকে কেন্দ্র করে নয়ন ও মোজাহিদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে মোজাহিদ নয়নকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল আর কোনদিন সুপারি পাড়তে আসলে পায়ের রগ কেটে সুপারির ঝোপে রাখবে। প্রতিশোধ নিতেই মোজাহিদের এই হুমকি অপরাধীরা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে নয়নকে হত্যা করে। তারা নয়নের শরীরে ১৭টি আঘাত করে পায়ের রগ কেটে পরিকল্পিতভাবে খুন করে এজাহারভুক্ত আসামীদের বাড়ির অদুরে মরদেহ রাখে এবং মরদেহের পাশে সুপারির ঝোপ রেখে দেয়।
নিহত নয়নের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ও মা অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির হওয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাসাতেই ভাতিজাকে খুন করে সবুজ মিয়া সুকৌশলে ভাই
আব্দুল ওয়াদুদকে ভুল বুঝিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সবুজ মিয়াসহ তৃতীয় স্বার্থন্বেষী পক্ষ শিশু নয়নকে হত্যা করে তারা প্রতিশোধ ও ফায়দা লুটে নেওয়ার জন্য বাদীকে বিভিন্নভাবে ভুল বুঝাচ্ছিলেন। এমনকি যে রাতে নয়ন নিখোঁজের কথা বলা হচ্ছিল সে রাতে এজাহারভুক্ত ৪ জন আসামী নিহত নয়নকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও শিখিয়ে দেয় এই স্বার্থন্বেষীরা।
নয়নের মরদেহের পাশে সুপারির ঝোপ রাখা এবং মামলাটির তদন্তভার পিবিআই গ্রহণের পর থেকে রহিমা হত্যা মামলার আসামীরা আত্মগোপনে যাওয়ায় সন্দেহের ভিত্তিতে ২৪ মার্চ রহিমা হত্যা মামলার ১ নং আসামী শামসুল হককে গ্রেফতার করলে তিনি নয়ন হত্যার সাথে আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ (৩০), জজ মিয়া (৩৪) ও আব্দুল কুদ্দুস (৪০) দের জড়িত থাকার বিষযে স্বীকার করেন। তারা তাকে প্রস্তাব দেন যে শিশু নয়নকে হত্যা করলে তারা প্রতিশোধ নিতে পারবে। এছাড়া একজন সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় বিবৃতিতে উক্ত তিনজনসহ বাদীর ভাই সবুজ মিয়া (৪৫) ও নুরুল হক (৫০) এর হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কথা বলেন। তারা সবাই ২০১৭ সালের রহিমা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন এবং নয়ন হত্যা মামলা পিবিআই তদন্তভার গ্রহনের পর থেকে পলাতক ছিলেন। গত ১৪ তারিখে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পলাতক সন্দেহভাজন আসামী আসাদুজ্জামান তার গ্রামে গভীর রাতে আসলে পিবিআই এর একটি চৌকস দল তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তিনি নয়ন হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দেন এবং গত ১৫ তারিখে ০১ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আসার পর হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা পিবিআই, নেত্রকোণা জেলার কাছে স্বীকার করেন এবং তার দেখানো মতো গত শুক্রবার ভোরে পানগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনের জঙ্গল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৮ মাস আগে পুঁতে রাখা মরিচা ধরা ছোরা উদ্ধার করা হয়।
অস্ত্র উদ্ধারের পর গত শনিবার তাকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরন করেন।
মন্তব্য করুন: