প্রকাশিত:
১৪ জুন ২০২৩, ২১:৩৮
নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে রং নম্বরে পরিচয় হওয়া প্রবাসী মো. আলতাফ হোসেনকে (২৮) কথা দিয়ে কথা না রাখায় গৃহবধূ নুরুন্নাহারকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় তার মেয়ে প্রিয়ন্তী (১৭) বিষয়টি দেখে ফেলায় তাকেও হত্যা করা হয়।
বুধবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আলতাফ হোসেন ওমান প্রবাসী এবং বিবাহিত। একদিন রং নম্বরে গৃহবধূ নুরুন্নাহারের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তারপর থেকে তাদের দুইজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। ওমানে ভালো টাকা আয় করতে না পারায় নুরুন্নাহারের টাকা দিয়ে দেশে ব্যবসা শুরু করার আশ্বাসে দেশে আসেন আলতাফ। কথা দিয়ে কথা না রাখায় ভয় দেখাতে নুরুন্নাহারের বাসায় গিয়ে গলায় ছুরি ধরেন আলতাফ। নিজেকে বাঁচাতে পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ে প্রিয়ন্তীর রুমে চলে যান নুরুন্নাহার। সেখানে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় নুরুন্নাহারকে। বিষয়টি মেয়ে দেখে ফেলায় মেয়েকেও ছুরিকাঘাত করেন আলতাফ।
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, আলতাফ হোসেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের চর মেহের গ্রামের মৃত আবুল কালামের ছেলে। তাকে বাসা ভাড়া নেওয়ার কৌশল করে আজ ব্যবসার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নুরুন্নাহার। টাকা না দেওয়ায় হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা ছুরি এবং ছুরির কভার উদ্ধার করেছি।
পুলিশ সুপার বলেন, আলতাফ হোসেনের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত থেকে বাঁচতে প্রিয়ন্তী দৌঁড়ে নিচে নেমে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আসামি আলতাফ হোসেন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। নুরুন্নাহার ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করলেও মেয়ে প্রিয়ন্তীকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হবে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, আমরা ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছি। সবার আগ্রহ ছিল বলেই আমরা বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। গৃহবধূর স্বামী ফজলে আজিম কচির দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আলতাফকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। যদি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি না দেয় তাহলে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ, সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সুধারাম মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান পাঠানসহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের গুপ্তাংক এলাকার বার্লিংটন মোড়ের নিজ বাসায় সন্ত্রাসীরা মা নুরুন্নাহার ও মেয়ে প্রিয়ন্তীকে কুপিয়ে জখম করে। মা ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করলেও মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা আলতাফ হোসেন নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
নিহত নুরুন্নাহার নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের গুপ্তাংক এলাকার বার্লিংটন মোড়ের মানিক মিয়ার বাড়ির ফজলে আজিম কচির স্ত্রী। প্রিয়ন্তী তাদের মেয়ে।
প্রিয়ন্তীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে সড়ক অবরোধ করে তার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। তাদের আধাঘণ্টা ব্যাপী সড়ক অবরোধে সোনাপুর-চৌমুহনী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়। এ সময় তাদের হাতে ফাঁসির দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
মন্তব্য করুন: