প্রকাশিত:
১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:০১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রেললাইন ভাঙ্গা থেকে যশোরে সংযোগ হবে, যশোর থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযোগ হচ্ছে। আরেকটি প্রকল্প আমাদের মাথায় আছে, অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করেছি, সেটা হচ্ছে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে ঝালকাঠি, পটুয়াখালী হয়ে একেবারে পায়রা পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা আছে, ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে।
তবে এটা কঠিন কাজ, আমাদের মাটির সক্ষমতা একটু কম। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। আমাদের লক্ষ্য ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পরে মাওয়া প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনে চড়ে ভাঙ্গা স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হয়েছিল। এক ভদ্রলোক, হ্যাঁ বিশ্বখ্যাত, নাম হয়েছে তার। কিন্তু সমস্যা একটা ব্যাংকের এমডির পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার কারণে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তার পক্ষে। সেদিন বলেছিলাম, নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করবো। আমরা তা করে দেখিয়েছি। জাতির পিতা বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। এ বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আজকে যারা ভোটের কথা বলে, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধুয়া তোলে আর প্রতিদিন আমাদের ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে অবৈধভাবে এবং ভোট চুরি করা ছাড়া কোনো দিন ক্ষমতায় আসেনি। এ কারণে ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ভোট ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। তার পর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট ও নির্বাচন নিয়ে খেলা, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করা, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা এ ধ্বংসযজ্ঞেই তারা মেতে আছে।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতিকে আমি আহ্বান করবো, বাঙালি জাতির ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি, বাংলাদেশ জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই এগিয়ে যাবে, মাথা তুলে দাঁড়াবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, দুর্ভাগ্য তাকে হত্যা করা হয়। ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। তখন থেকেই জনগণের সেবা করতে আমরা শুরু করি। আমার প্রশ্ন, ৭৫ সাল থেকে ৯৬ আর ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল কেন পারেনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে। আসলে তারা স্বাধীনতায়, সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেনি। এদেশের মানুষের দিকে তারা ফিরে তাকায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আমরা যে কর্মসূচি নিই তার সুফল এদেশের মানুষ পাচ্ছে। ১৯৯৮ সালে ২৩ জুন আমরা যমুনা নদীর ওপর প্রথম সড়ক ও রেলসহ বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করি। পরে ২০০৮ নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় আসি ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি রেলকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হিসেবে ঘোষণা দেই, এ রেল যোগাযোগ যাতে আরও ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠে তার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে যে রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল সেগুলো উন্মুক্ত করে দিই, আঞ্চলিক যোগাযোগের আমরা পদক্ষেপ নিই। সেই সঙ্গে আমরা গত সাড়ে ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা এ সাড়ে ১৪ বছরে ৮২৩ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেল ডুয়েলগেজ, ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার লাইন পুনর্গঠন, পুনর্নির্মাণ এবং একই সময় ১ হাজার ১২৬টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ৪৯৪টি রেলসেতু পুনর্নির্মাণ, ১৪৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ, ২৩৭টি স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণ করেছি।
তিনি বলেন, রেলের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এ পর্যন্ত ১০০ লোকোমোটিভ, ৬৯৮ যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন, ৫০টি লাগেজ ভ্যানসহ রেলওয়েতে সংযুক্ত হয়েছে। আর বিভিন্ন রুটে ১৪৩ নতুন ট্রেন চালু হয়েছে, ১৩৪টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থা উন্নত এবং আধুনিক করা হয়েছে। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমরা আশা করি বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বাড়বে। মানুষের জীবন মান আরও উন্নত হবে।
মাওয়া প্রান্তে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সেনাপ্রধান জেনারেল শেখ মো. শফিউদ্দিন আহমেদ এবং সচিব হুমায়ুন কবির।
মন্তব্য করুন: