সোমবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৪, ২২শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সেপ্টেম্বরে সড়কে প্রাণ গেল ৪২৬ জনের
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

নেত্রকোণা সরকারি শিশু পরিবার, ১৭ পদের ৭টিই শূন্য

তিন বেলা খাবারে বরাদ্দ মাত্র ৮০ টাকা!

মেহেদী হাসান আকন্দ,নেত্রকোণা

প্রকাশিত:
৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৫৫

নেত্রকোণা সরকারি শিশু পরিবারে শিশুদের জনপ্রতি তিন বেলা খাবারে বরাদ্দ মাত্র ১০০ টাকা। শতকরা ৫ টাকা ট্যাক্স ও বিকালের ১৫ টাকা নাস্তা বাদে রান্নার জ্বালানীসহ তিন বেলা খাবারে বরাদ্দ জনপ্রতি মাত্র ৮০ টাকা। মাত্র ৮০ টাকায় তিন বেলা খাবার অসম্ভব বলে দাবী পুষ্টিবিদদের।

অপ্রতুল বরাদ্দের পরও মানসম্পন্ন খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপ-তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসেন। নেত্রকোণা সরকারি শিশু পরিবারে শিশুদের সকালে দেওয়া হয় সবজি ভাত, দুপুরে সবজি ভাতের সাথে ব্রয়লার মুরগীর এক টুকরো মাংস, রাতে সবজি ভাতের সাথে এক পিস মাছ। তিন বেলা খাবারের সাথেই থাকে পাতলা ডাল। অনেক সময় দুপুরের খাবারে মাংসের পরিবর্তে দেওয়া হয় ডিম। শিশু পরিবারের ঠিকাদার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি দরপত্র অনুযায়ী খাদ্যপণ্য কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন।

১০০ আসন বিশিষ্ট শিশু পরিবারে জেলার ১০০ জন এতিমকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নেত্রকোণা সরকারি শিশু পরিবারে লালন-পালন করা হয়। এদের মধ্যে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ৫৬ জন, মাধ্যমিকে ৩৩ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে রয়েছে ১১ জন শিক্ষার্থী।

জানা যায়, প্রতিমাসে জনপ্রতি সরকারি বরাদ্দ ৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে এক হাজার টাকা ব্যয় হয় শিক্ষা খাতে। অথাৎ স্কুলের বেতন, প্রাইভেট শিক্ষকের বেতন, বই-খাতা, কলম, গাইড বই, স্কুল ডেস, ব্যবহার্য পোশাক, জুতা-সেন্ডেল, প্রসাধনী, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসায় ব্যয় হয়। খাবারের জন্য বরাদ্দ বাকী ৩ হাজার টাকা। শতকরা ৫ টাকা ট্যাক্স বাদে ২ হাজার ৮৫০ টাকার মধ্যে বিকালের নাস্তা বাবদ প্রতিদিন জনপ্রতি ১৫ টাকা, মাসে ৪৫০ টাকা। মাসে ২ হাজার ৪ শত টাকা, দৈনিক ৮০ টাকায় জ্বালানী খরচ ও ঠিকাদারের কমিশনসহ জনপ্রতি তিন বেলা খাবার। নেত্রকোণা সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম বলেন, অস্থিতিশীল বাজার মূল্যের কারণে ফুটপাতের ধারে ভাসমান খাবার দোকানেও নিম্নআয়ের মানুষেরা ৮০ টাকায় এক বেলা পেট ভরে খেতে পারেনা। সেখানে ৮০ টাকায় কি করে তিন বেলা খাবার পরিবেশন করে। শিশু আইনে বলা আছে, শিশুদের সর্বোত্তম সংরক্ষণ করতে হবে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

নেত্রকোণা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: আহসান কবীর রিয়াদ বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির জন্য বয়স অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। জনপ্রতি মাত্র ৮০ টাকায় তিন বেলা খাবারে পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা সম্ভব বলে মনে হয়না। বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারটান) নেত্রকোণা বিভাগীয় কার্যালয়ের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ-উন-নাহার বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে অবশ্যই নির্ধারিত পরিমান পুষ্টিকর সুষম খাবার পরিবেশন করা প্রয়োজন। জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি শিশু পরিবারটি পরিচালনার জন্য ১ জন উপ-তত্ত্বাবধায়ক, ১ জন সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, ২ জন সহকারী শিক্ষক, ১ জন বড় ভাইয়া, ২ জন কারীগরী শিক্ষক, ১ জন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ১ জন কম্পাউন্ডার, ১ জন মেট্ধসঢ়;্রন কাম নার্স, ৫ জন অফিস সহায়ক ও ২ জন বাবুর্চি সহ ১৭টি পদ থাকলেও ২ জন সহকারী শিক্ষক, ২ জন কারীগরী প্রশিক্ষক, ১ জন বাবুর্চি সহ ৭টি পদ রয়েছে শূন্য।


উপ-তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসেন জানান, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে জনপ্রতি মাত্র ৮০ টাকায় তিন বেলা খাবার পরিবেশন খুব কষ্টকর হয়ে যায়।তাছাড়াও শিশুদের বাড়ন্ত বয়স, এই বয়সে আরও পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন।এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ২ জন কারীগরী প্রশিক্ষক ও ২ জন সহকারী শিক্ষক না থাকায় বাহিরে থেকে শিক্ষক এনে শিশুদের প্রাইভেট পড়াতে হয়। ফলে প্রাইভেট শিক্ষককে অনেক টাকা বেতন দিতে হয়। এছাড়াও প্রতিদিন ১০০ জনের তিন বেলা রান্না মাত্র ১ জন বাবুর্চির পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ব্যক্তিগত অসুবিধা বা শারীরিকঅসুস্থতার কারণে তিনি অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নাই। এছাড়াও গ্যাস সংযোগ থাকলে জ্বালানী খাতে খরচ কিছুটা কম হতো। সমস্যাগুলো শিশু পরিবারের সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয় ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মহোদয়কে লিখিত ভাবে তিনি জানিয়েছেন। সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সেলিম মিঞা বলেন, শিশুদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটির চারটি স্তরের উপর ভিত্তি করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট সিটিজেন তৈরির জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে শিশুদের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। নেত্রকোণা সরকারি শিশু পরিবারে শিশুদের জন্য অপ্রতুল এই বরাদ্দ দিয়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থসেবার উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থসেবার উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলাল উদ্দিন জানান, নেত্রকোণা সরকারি শিশু পরিবারে শিশুদের জন্য অপ্রতুল বরাদ্দ হলেও শিশুদের সাধ্যমতো পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে এই অপ্রতুল বরাদ্দ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থসেবার উন্নয়নে কঠিন চ্যালেঞ্জ। বর্তমান ব্যয়ের বিষয় এবং জনবল সংকটের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন।


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর