সোমবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৪, ২২শে আশ্বিন ১৪৩১ | ই-পেপার
ব্রেকিং নিউজ:
  • সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আগ্রহী হলে আপনার সিভি ই-মেইল করতে পারেন। ই-মেইল daajkaal@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
  • সেপ্টেম্বরে সড়কে প্রাণ গেল ৪২৬ জনের
  • পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি: সিপিডি
  • অভিন্ন জলরাশি নীতিমালা না হলে বন্যাঝুঁকি আরও বাড়বে: রিজওয়ানা
  • ব্যাংক নোটে নতুন নকশা, বাদ যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর ছবি
  • মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের
  • ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
  • সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে: আসিফ নজরুল
  • বৈরী আবহাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ
  • শহীদ পরিবারের পক্ষে আজ মামলা করবে নাগরিক কমিটি
  • ৪ বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

কুড়িগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও সহযোগিদের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতির দাবী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত:
১ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:০০

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবশ ধরলা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মতিয়ার মেম্বারের বাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদ, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী মতিয়ার মেম্বারের বাড়ীটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বরুপ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফলক নির্মাণ এবং সহযোগি মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতির দাবী জানিয়েছে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে উত্তর নওয়াবশ এলাকায় ধরলা নদীর তীর সংলগ্ন চারিদিকে পরিখা, নালা, খাল-বিল, পুকুর, গাছপালা ও জঙ্গল থাকায় এবং শত্রু বাহিনীর আক্রমণ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের নিরাপদ রাখতে মতিয়ার মেম্বারের বাড়ীকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। এই বাড়ী থেকেই নির্ধারিত হতো মুক্তিযোদ্ধারা রাতে কোথায় অপারেশন চালাবে। এই ক্যাম্পের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানী হায়নারা এবং আলবদর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পরাজিত হয়। প্রায় ২৪ বিঘা জমির উপর মতিয়ার মেম্বারের বাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ক্যাম্পে তৎকালীন সময়ে প্রশিক্ষিত আনসার, ইপিআর, মোজাহিদ, পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে গ্রামের দামাল ছেলেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিরক্ষার যুদ্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নেয়।


এই ক্যাম্প থেকেই অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা পাঁচগাছী ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুল হাকিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুসসালাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য মতিয়ার মেম্বারের বাড়িটিকে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান সহ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবী জানান। তারা আরো জানান, ১৯৭১ সালের ১২ই মে রংপুর পুলিশ লাইন্স এর সিপাহী মোঃ মাহাবুবার রহমান ও মোঃ নুরুজ্জামান বিদ্রোহ করে হারাগাছ হয়ে কাউনিয়া এরপর তিস্তা নদী পাড় হয়ে রাজারহাট হয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় পায়ে হেঁটে পৌঁছান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।


সিপাহী মোঃ মাহাবুবার রহমান এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধকালীন মতিয়ার মেম্বার বাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নেয়াসহ অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মতিয়ার মেম্বারের বাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থাকায় পাঁচগাছী ইউনিয়নের পানাতি পাড়া এলাকার মৃত কদম উল্যা শেখ এর পুত্র আব্দুল আজিম (৭৩), মৃত জোনাব আলীর পুত্র নুর হোসেন (৬২) উত্তর নওয়াবশ এলাকার মৃত কেরামত উল্যা ব্যাপারীর পুত্র দবির উদ্দিন (৭৪), মৃত আন্দারু শেখ এর পুত্র ফুলবর আলী (৭২) মৃত মতিয়ার রহমান এর পুত্র মমতাজ আলী (৭৬), মৃত সেকেন্দার আলী’র পুত্র আইয়ুব আলী (৬৭) ও কুড়িগ্রাম পৌরসভার একতা পাড়া এলাকার মৃত টেপরা মামুদ এর পুত্র জোবেদ আলী (৭৯), ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মৃত সাধু শেখের পুত্র নাসির উদ্দিন (৮০) ওই সময়ে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র দুই নদীর যাত্রাপুর পয়েন্টে একমাত্র নৌকার মাঝি ছিলেন নাসির উদ্দিন (৮০) অসীম সাহসিকতার মধ্য দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নৌকায় করে বিভিন্ন এলাকায় পারাপার করেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মতিয়ার মেম্বারের সহযোগিতায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে খাবার সংগ্রহ করে এনে দিতেন।


এই সকল ব্যক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগি হিসেবে অংশ নেয়। মতিয়ার মেম্বারের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পাহাড়া দেয়া সহ মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা হিসেবে সহযোগিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে খোঁজ-খবর এনে দিত। ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সহযোগিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে খাবার জোগার সহ রান্নার কাজ করত। এ কারণে সরাসরি অস্ত্র নিয়ে সহযোগিরা যুদ্ধে অংশ না নিলেও এবং ভারতে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে অনেকেই ব্যর্থ হয়। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় সহযোগিদের নাম না থাকলেও রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সহযোগিদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করে।


মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত মতিয়ার মেম্বারের বাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা নির্মাণ ও সংরক্ষণের দাবী জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) সিরাজুল ইসলাম টুকু, উদ্বোধক বীর মুক্তিযোদ্ধা (কোম্পানী কমান্ডার) আব্দুল হাই সরকার বীর প্রতিক, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা (কোম্পানী কমান্ডার) যোগেশ চন্দ্র সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হারুন-অর-রশিদ লাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা রোস্তম আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাশেম আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি নুরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন সর্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আইয়ুব আলী খান, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক নুর হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিমুদ্দি, কার্যকরী সদস্য জোবেদ আলী, বেলমতি দাস ও মোছাঃ আতরনী বিবি প্রমূখ।

 


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর